এবার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। নিখোঁজ হওয়া ইরানের এই প্রেসিডেন্টের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। এমন অবস্থায় ব্যাপক ঘন কুয়াশার মধ্যেই রাইসিকে উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। সোমবার (২০ মে) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এদিকে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ার পর তাদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীরা ঘন কুয়াশাসহ কঠিন পরিস্থিতিতে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছেন।
এছাড়া প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সম্ভাব্য দুর্ঘটনাস্থলে ৭৩টি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে বলে ইরানি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, উদ্ধারকারীরা তুর্কি ড্রোনের মাধ্যমে চিহ্নিত এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে রাইসির হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ইরানি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, ডিটেক্টর কুকুর-সহ ৭৩ টি দল এই উদ্ধার প্রচেষ্টায় জড়িত রয়েছে। তবে বৃষ্টি এবং কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা হ্রাসের কারণে আবহাওয়ার পরিস্থিতি সেখানে বেশ প্রতিকূল রয়ে গেছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট রাইসির সন্ধানে সহায়তার জন্য রাশিয়া ইরানে একটি উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে বলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। আরআইএ নভোস্তি জানিয়েছে, রাশিয়ার এই দলটিতে ৪৭ জন বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী, বেশ কয়েকটি যানবাহন যা উঁচু-নিচু ও অসমতল ভূমিতে চলতে পারে এবং একটি হেলিকপ্টার রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, উদ্ধারকারী এই সরঞ্জামগুলো এখন লোড করা হচ্ছে এবং পরে ইরানের তাবরিজ শহরে সেটি পাঠানো হবে। দুর্ঘটনার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট এই শহরেই গিয়েছিলেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে উদ্ধৃত করে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘হেলিকপ্টার এবং উদ্ধারকারী দলটির সবাই উচ্চ উচ্চতায় সবচেয়ে কঠিন কাজ করতে প্রস্তুত। কুয়াশাসহ আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনুসন্ধান এবং উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বিশেষজ্ঞরা সেই উদ্ধার প্রচেষ্টায় যোগ দেবেন।’
এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা অঞ্চলের এই অনুসন্ধান প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য আরও বেশ কয়েকটি দেশ তাদের উদ্ধারকারী দলও পাঠাচ্ছে। আল জাজিরা বলছে, ‘প্রায় অনিবার্য’ আবহাওয়াই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ভূমিকা রেখেছে বলে একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন। পল বিভার নামে একজন বিমান বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক হেলিকপ্টার পাইলট বলেছেন, ব্যাপক ঘন মেঘ, কুয়াশা এবং নিম্ন তাপমাত্রা অবশ্যই ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারটির বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও বলেছেন, ফিক্সড-উইং প্লেনের বিপরীতে হেলিকপ্টারগুলো খুব সহজেই এমন আবহাওয়াই ওপরে উড়তে পারে না। হেলিকপ্টারগুলোর সেই ধরনের সক্ষমতা নেই। এর আগে রোববার একটি বাঁধ উদ্বোধন করে ইরানি প্রদেশ পূর্ব আজারবাইজানের তারবিজে যাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। এই সময় তার সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। তারবিজে ফেরার পথেই হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজানের সীমান্তের কাছে কিজ কালাসি এবং খোদাফারিন বাঁধ দুটি উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে সেখানে ভারী কুয়াশা থাকায় অনুসন্ধান অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকার দৃষ্টিসীমা মাত্র পাঁচ মিটারে নেমে এসেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।